Skip to content

কোথায় চলেছে তারুণ্য? কোথায় অভিভাবক? | মতামত

একটা গল্প দিয়ে শুরু করি। চল্লিশে পা দেয়া এক ভারতীয় নারী সহকর্মী গল্পটি বলেছিল আমাকে। প্রায়ই নানা বিষয়ে গল্প করতাম আমরা। সিনেমা থিয়েটার নাটক জীবন সব বিষয়ে মত বিনিময় ও আড্ডা দিতে ভালোবাসত মেয়েটি। হঠাৎ একদিন দেখি সে খুব বিমর্ষ। এই বিমর্ষতা ক’দিন চলমান দেখে চেপে ধরেছিলাম। কী হয়েছে বলো? অবশেষে এক দুপুরে আমাকে বিস্মিত করে বলা সে ঘটনাটি এখনো আমার মনে গেঁথে আছে। তাদের একমাত্র বাচ্চা মেয়েটি একদিন সবাইকে অবাক করে জানিয়েছিল বড় হলে সে মোবাইল ফোন হতে চায়। তার এই বিস্ময়কর ইচ্ছায় সবাই অবাক হলেও মায়ের মনে প্রশ্নটি থেকে গিয়েছিল। ভুলতে না পারা মা চেষ্টা করে বের করে এনেছিল মেয়ের এই ইচ্ছার কারণ। মেয়েটি খুব সরল ভাবে জানিয়েছিল মা-বাবা সারাদিন মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে। মোবাইল বুকে নিয়ে ঘুমায়। মোবাইল থাকে বিছানার শিয়রে। বাচ্চা মেয়েটি অভিমান করে বলেছিল এই পরিবারে সে মোবাইল হলেই ভালো হতো। যেসব পিতা-মাতা কন্যার চাইতে মোবাইলকে ভালোবাসে তাদের জন্য এটি একটি বড় শিক্ষা বা উদাহরণ।

আজকের বাংলাদেশ বা বলতে গেলে পুরো দুনিয়াতেই এই প্রবণতা। কিন্তু একটু তফাৎ আছে। আমরা মনে করি বা সাধারণ ভাবে মনে করা হয় বিদেশ মানেই সব খোলামেলা। এই ধারণাটা একেবারেই ভুল। আমি এদেশে এসে দেখেছি আমরা কতটা ভ্রান্তি আর ভুলে থাকি। এখানে যেকোন মিটিং বা সভা বা অফিসের পার্টিতে গেলেই নারীরা এসে গালে চুমু খায়। এর ভেতর যদি কামনার গন্ধ থাকে তাহলে খবর আছে। এই চুম্বন এক ধরনের করমর্দনের মতো। শুভেচ্ছা বিনিময়ের বাইরে এর কোনো অর্থ নাই। আমরা এমন ধারণা পোষণ করি যে সাদা চামড়ার নারী মানেই যৌনতা প্রিয় আর বহুমুখি। এসে দেখে যান একবার খারাপ চোখে তাকালে কিংবা খারাপ কোনো মন্তব্য করলে আপনার জায়গা কোথায় হয়। দেশছাড়া তো হবেনই, এমন শাস্তি পাবেন যে জীবনে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেন না।

এসব কথা বলার উদ্দেশ্য একটাই আজকের বাংলাদেশে আমাদের সন্তানেরা আসলে কোথায় দাঁড়িয়ে। এখন পুলিশ, র‍্যাব বা বাহিনীর ওপর মানুষ খুব একটা খুশি বা সন্তুষ্ট না। কিন্তু এই যে পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ সত্যি কথা বললেন সেটা কি আপনি অস্বীকার করতে পারবেন? ভদ্রলোক ঠান্ডা মাথায় ধীরে ধীরে কথা বলেন। কলাবাগানের ঘটনাটিকে তিনি পূর্ণাঙ্গ ক্রাইম বা সম্পূর্ণ অপরাধ বলে রায় দিয়েছেন। কথাটা সত্য। কেবল বয়স বিবেচনায় কিশোর কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে যদি ছাড় পেয়ে যায় ভবিষ্যতে এই বয়সী বাচ্চারা কী করবে? তারা কি জেনে গেল না এতবড় অপরাধ, মেয়ে বন্ধুকে বাড়িতে এনে ধর্ষণ করে তার অপরিণত যৌনাঙ্গের রক্তপাত বন্ধ করতে না পারায় মেরে ফেলা এতসবের পরও তাদের কেন সর্বোচ্চ শাস্তি পেতে হবে না? আর যদি তা না হয় কিশোর অপরাধ দমন হবে কী করে?

যে কথা বলছিলাম আজ সমাজে একদিকে যেমন পোশাক, খাবার, আচরণ এবং কথায় ধর্মভীরুতার দোহাই আর অন্যদিকে চলছে তলে তলে উদ্দাম অবাধ যৌনতা। ঐ যে বললাম পাশ্চাত্য তার ব্যবসা তার বাজারের জন্য যা গিলায় তাই আমরা গলধকরণ: করি আর ভাবি আহা কী আধুনিক। অথচ তারা তাদের জীবনে জীবনাচরণে এগুলোর এস্তেমাল করে না। তাদের সামাজিক জীবন মূলত সীমাবদ্ধ এক পরিবার সুলভ স্বাভাবিক জীবন। পানির বদলে বিয়ার পান আর পাবে গিয়ে দুয়েক পেগ স্বাস্হ্যসম্মত তরল পানীয় পান করলে কেউ মাতাল হয় না। আমরা করি উল্টোটা। সবচাইতে ভয়াবহ জায়গায় আছে পরিবার বা পারিবারিক বন্ধন। বলতে গেলে এই বন্ধন এখন বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো। আমরা যদি এই আঁটুনি আবার ফিরিয়ে আনতে না পারি বাঙালির কপালে দুর্ভোগের শেষ থাকবে না।

প্রতিটি পরিবার আক্রান্ত। শুধু শহরে না গ্রামেগঞ্জেও আজ মারমারি, হানাহানি আর পরিবার বিচ্ছিন্নতা। ক’দিন আগে যে যুবকটি ক্রিকেটার সাকিবকে খুন করার আগ্রহ দেখিয়ে ভিডিও প্রচার করল সেই ভিডিওটি ভালো করে দেখেন। এটা কোনো স্টুডিও বা অফিসে ধারণ করা না, এটা একটা বাসায় নির্মিত বা ধারণ করা ভিডিও। সে রাত দুপুরে হোক আর দিন দুপুরে হোক কিভাবে এমন গর্জন করা সম্ভব? যার মানে হয়তো বাড়ির কেউ কেউ তখন ঘুমে আর যারা জেগে তারা নৈশকালীন ফেইসবুকে কানে গুঁজে ছিল হেডফোন। সুতরাং কে শোনে কার কথা? এই বেপরোয়া মনোভাবের কারণও কিন্তু পরিবার বিচ্ছিন্নতা।

আপনি ভালো করে ভেবে দেখুন শেষ কবে কিশোর বা তরুণ বাচ্চাটিকে বুকে নিয়েছেন? কবে তাকে পুরো একটা দিন সময় দিয়েছেন? সে কোন কোন শিক্ষকের কাছে পড়ে, কি পড়ে আপনি আসলেই জানেন? গত বছর তার রেজাল্ট কিসে ঝলসে উঠেছিল আর কিসে থমকে গিয়েছিল মনে আছে আপনার? মায়েরা একটু আধটু বেশি জানেন। কিন্তু অধিকাংশ মা-বাবারাই এখন অনলাইনে বা নিজেদের কাজে ব্যস্ত। অভিভাবক ধীরে ধীরে সন্তান বিচ্ছিন্ন হয় একসময় হয়ে যায় দেয়ালের মতো। এই দেয়ালের আড়ালে আরেক পাশে তার সন্তান হয়ে ওঠে ধর্ষক খুনী বা মাদক পাচারকারী। যখন ধরা পড়ে যখন জানাজানি হয়ে যায় তখন সব শেষ। ফেরার বা পালাবার পথ থাকে না আর।

আজকের সমাজে আমাদের কিশোর কিশোরীদের জন্য সে সময়কার শিশু সংগঠন নির্মল আনন্দের সাহিত্য, শিল্প, আড্ডা কিংবা বিনোদন কিছুই নাই। আজ বন্ধুত্বের আবরণে চলছে যৌনতার আদান প্রদান। তাদের বয়সটা এমনই তারা ভালো মন্দ বোঝে না। তাদের অপরিণত মন যা পায় তা নিয়েই খুশি। সাথে আছে মাদক আর সঙ্গদোষ।

পরিবারে যদি ঐক্য শান্তি আর ভালোবাসা না থাকে সন্তান কী করে ভালো হবে? কথায় বলে যেমন বীজ তেমনি ফসল। এই কথা মানতে হবে। আগের দিনেও অপরাধ ছিল, ছিল নানা ধরনের কুকর্ম। কিন্তু এমন নিষ্ঠুর অমানবিক কিশোর-কিশোরী বা তারুণ্য ছিল না। ছিল না এমন অবাধ যৌন অপরাধ আর এতসব জঘন্য কর্মকাণ্ড।

অভিভাবকত্বের জায়গাটা আজ শূন্য। বড় ফাঁকা সমাজের মেধার জায়গা। নাই গবেষণা, নাই চর্চা, নাই কোনো পরিকল্পিত জাতিসত্তার বিস্তার। ঘর, পরিবার আর সমাজ ঠিক না হলে পারস্পরিক ভালোবাসা, বন্ধন, মায়া না থাকলে এই সমস্যার সুরাহা অসম্ভব। আমরা কি এগুলো ফিরিয়ে আনার মতো সমাজ আর কোনো কালে দেখতে পাব?



উৎস লিংক

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on email

হট নিউজ

প্র্রশ্নোত্তর

সর্বশেষ খবর

Stay Connected

আরও খবর

subscribe to our newsletter

I expressly agree to receive the newsletter and know that i can easily unsubscribe at any time